
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার বছর না পেরোতেই ফের পানিতে ডুবেছে ফেনীর জনপদ। বন্যা কবলিত নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকায় পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। জেলার ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার কিছু অংশে লোকালয়ে এখনো পানি থাকলেও অন্য দুই উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। দুর্গত এলাকায় পানি নামার সঙ্গে ভেসে উঠেছে ক্ষতচিহ্ন। অনেক এলাকায় খাদ্য ও নিরাপদ পানির সংকটে বানভাসি মানুষের ভোগান্তি এখনো কমেনি।
কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, এবারের বন্যায় ২ হাজার ৩৫০টির বেশি মৎস্য ঘের ও পুকুর এবং ১ হাজার ৬৫৫ হেক্টর আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও বন্যায় এখন পর্যন্ত পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় প্রাণিসম্পদে ৬৪ লাখ ৯৮ হাজার ৭৫০ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পুরোপুরি পানি নেমে যাওয়ার পরই ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত পরিমাণ তুলে ধরা হবে বলে জানান তারা।
ফুলগাজীর উত্তর তারালিয়া এলাকার বাসিন্দা আছমা আক্তার বলেন, ঘর থেকে পানি নামলে বাড়ির উঠোনে হাঁটু সমান পানি রয়েছে। রান্না করার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। ঘরে থাকা চাল-ডাল, ধানসহ অন্যান্য জিনিসপত্র পানিতে ভিজে গেছে। আবার টাকা থাকলেও সরবরাহ না থাকায় বাজারে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে না।
মঞ্জুনা আক্তার নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, অন্যান্যবারের চেয়ে এবার পানি অনেক ধীরগতিতে নামছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন অংশ দিয়ে এখনো পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। আমর এ পরিস্থিতির একটি স্থায়ী সমাধান চাই। প্রতিবছর ভাঙনের পর সরকারের লোকজন এসে টেকসই বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দেন। কিন্তু পরে তা আর বাস্তবায়ন হয়না।
পরশুরামের চিথলিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. হালিম চৌধুরী বলেন, সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা খরচ করে ঘর করেছি। এখনো একদিনও সেই ঘর ব্যবহার করতে পারিনি। বাঁধ ভাঙার খবর পেয়ে ঠেকাতে গিয়েছিলাম, কিন্তু ততক্ষণে পানি ঢুকে ঘরটি চোখের সামনে পানিতে তলিয়ে গেছে।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, জেলায় টানা পাঁচ দিন ধরে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল। তবে শুক্রবার সূর্যের দেখা মিলেছে। তারপর থেকে বৃষ্টিপাত বন্ধ রয়েছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন বলেন, পরশুরাম, ফুলগাজী অংশে নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর অংশে পানি কিছুটা বেশি। বাঁধের ভাঙনের স্থান দিয়ে এখনো পানি ঢুকছে। পানি কমার পরেই বাঁধ মেরামতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার রাতে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম কথা বলেছেন। জেলায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সাড়ে ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে শুকনো খাবার, গো-খাদ্য ও শিশু খাদ্যের আরও ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী নৌযানের মাধ্যমে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে প্রশাসনকে সহযোগিতা করছে।
এর আগে ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানিতে গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১টি অংশে ভাঙনের দেখা দেয়।